ঘটনা শুনলেই অপরাধীকে গণপিটুনী দিতে সবার হাত নিশপিশ করে
নাঃগঞ্জ ধর্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাজপথে
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ০০:৩৬, ১০ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ০০:৫৫, ১০ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে হঠাৎ করে ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খুবই বিক্ষুব্ধ। কোন ঘটনা শুনলেই অপরাধীকে গণপিটুনী দিয়ে উচিৎ শিক্ষা দিতে সবার হাত নিশপিশ করে। যেনো এখুনি ওই জঘন্য অপরাধীকে শূলে চড়িয়ে দেয় ! সাধারণ মানুষ এমন সংক্ষুব্ধ হওয়ার পরও ধর্ষণ ঘটনা মোটেও কমছেনা।
খুলনায় এক ধর্ষককে আদালতে নেয়ার সময় উত্তেজিত জনতা তাকে রাস্তায় গণপিটুনী দিয়েছে খুলনা নগরীতে। গতকাল রোববারের (৯ মার্চ) এই ঘটনার সাথে যোগ হয় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সৎপিতার ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি। পুরো নারায়ণগঞ্জবাসী বিক্ষেোভে ফেটে পড়ে। রাস্তায় নেমে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে তারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শহরে মশাল মিছিল বের করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তোলারাম কলেজ ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থীরা। এরআগে সারাদেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদী মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন তারা। পরে সাড়ে বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধু সড়কে মিছিল বের করেন।
শহরের বোদ্ধামহলের লোকজন বলেন, ধর্ষণ আমাদের ঘুনে ধরা সমাজের একটি জঘন্য অপরাধ। ডিজিটাল যুগের একটি অভিশাপ। নব্বইয়ের দশক পয্যন্ত বিনোদনের সীমা রেখাটা বেশ মোটা দাগেই ছিল। প্রথমে ডিসলাইন এরপর ইন্টারনেটের যুগ। মোবাইল নেটওয়ার্কিং এর কারণে সবকিছু মোবাইলে মিলছে। নিষিদ্ধ বিনোদনের সবকিছু বাটন চাপলেই হাজির হয় হাতের মুঠোয়। এ কারণে মানুষের মধ্যে নৈতিক শিক্ষাটা কমে গেছে। বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা।
এদিকে, সারাদেশে হঠাৎ ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
সারাদেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদী মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন তারা। পরে সাড়ে বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধু সড়কে মিছিল বের করেন।
এ সময় তারা আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই, একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর, তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া, লড়াই করে জিততে চাই, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ধর্ষণবিরোধী এ অবস্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষও অংশ নেন।
মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা ধর্ষণের শিকার আছিয়াকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে দেখেছি। আমরা কী পরিমাণ অনিরাপদ ও অসহিষ্ণু রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে আছি, তা আছিয়াকে দেখলেই বোঝা যায়। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে, তা ভেঙে নতুন বিচারিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। আছিয়া, তনু, মুনিয়ার জন্য নিরাপদ ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ গড়তে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের যাত্রা থেকে বিফলে যাবো।”
দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে নতুন বিচারিক কাঠামো গড়ার দাবি জানান ছাত্রনেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহা, সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, অর্থ সম্পাদক শাহিন মৃধা, নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার আহ্বায়ক মৌমিতা নুর, তোলারাম কলেজের মুন্নি আক্তার প্রত্যাশাসহ প্রমুখ।
এদিকে, বেলা বারোটার দিকে চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তারা পরে শহীদ মিনারে সারাদেশে সংঘটিত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান, সদস্য সচিব মো. জাবেদ আলম, মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজ খান, সদস্য সচিব হৃদয় ভূঁইয়া, জেলা কমিটির মুখপাত্র সারফারাজ হক সজীব, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শেখ সাব্বীর আহমাদ, ছাত্র মজলিসের মহানগরের সভাপতি শাহ নেওয়াজসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
জানাগেছে, সারাদেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও দ্রুত বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে।
রবিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় কলেজ প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার প্রত্যাশা বলেন, "আমরা চাই, গত কয়েকদিনে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার হোক। আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমরা কতটা অনিরাপদ পরিবেশে বাস করছি।"
তিনি আরও বলেন, "ফতুল্লায় একজন কলেজ শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। র্যাব অপরাধীকে ধরলেও বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমরা প্রত্যেক ধর্ষকের বিচার দেখতে চাই। বিচারহীনতার কারণেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। আমরা চাই, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি—ফাঁসি নিশ্চিত করা হোক।"
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, "সরকার বলেছে, ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু যেখানে আছিয়ার ধর্ষণকারীরা চিহ্নিত, সেখানে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার দাবি করছি। চব্বিশের পরেও দেশে বিচারহীনতা চলছে, আমরা তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।"
এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী খাইরুন নাহার, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম আরা শিউলি, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জিন্নাতি নূর, জান্নাতুল ফেরদৌসী মাওয়া, মাহমুদা মজুমদার তাহা, রাইসা ইসলামসহ প্রমুখ।