জাকির খান কারামুক্ত

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ২৩:৪৮, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২৩:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

জাকির খান কারামুক্ত

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খান

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খান কারামুক্ত হয়েছেন। রোববার ( ১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারাগারের সুপার মুহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ। তিনি জানান, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে আজ রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাকির খানকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে আলোচিত এ নেতাকে বরণ করে নিতে কয়েক হাজার সমর্থক ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে সামনে উপস্থিত হন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাকে ফুল দিয়ে করেন সমর্থকরা। এরপর দেওভোগে নিজ বাড়িতে যান জাকির।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের মুক্তির খবরে আজ সকাল থেকে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।

 

জানা যায়, হত্যাসহ ৩৩ মামলার আসামি ছিলেন জাকির। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে তাকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান।

সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার মাসদাইর এলাকায় আততায়ীদের গুলিতে প্রাণ হারান সাব্বির আলম। এ ঘটনায় মৃতের বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলা জাকির, তার দুই ছোট ভাই মামুন খান এবং জিকুকেও আসামি করা হয়।

দীর্ঘ ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হলে প্রধান আসামি হন জাকির। পরে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি হয়। সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার সময়ে ভারতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে আদালতে স্বাক্ষী প্রমাণ তুলে ধরেন জাকির। এরপর থেকে তিনি পলাতক জীবনে গেলে নারায়ণগঞ্জে প্রকাশ্যে রাজনীতি জীবন থেকে ছিটকে পড়েন।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শহরের দেওভোগ এলাকায় জাকির খান তাঁর বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান।

তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকার পর গোপনে দেশে ফিরে এসে রাজধানীর বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় পরিচয় গোপন করে সপরিবার বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ জাকির খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে জাকির খানসহ সব আসামি খালাস পান।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সাজা শেষে জাকির খান কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি ২৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন। তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, সেই মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন।

 

 

 

 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন