পুলিশের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে পারে বলে সতর্কতা অবলম্বন করছে

শামীম শ্যালক টিটুর পালক রানা গোমর ফাঁস করলো

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ২৩:৫১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শামীম শ্যালক টিটুর পালক রানা গোমর ফাঁস করলো

নানান কৌশল। হাজারো পন্থায় চেষ্টা। কোন কিছুতেই শেষ রক্ষা হয়নি। শামীম ওসমানের শ্যালক তানভির আহমেদ টিটুর সহযোগী এসএম রানা ধরপড়ে সব তথ্য ও গোমর ফাঁস করলো পিবিআই নারায়ণগঞ্জ এর তদন্তকারী টীমের কাছে। পিবিআই সে সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের বাপ্পি চত্ত্ব্বরের ড্রাইভার পুত্র এসএস রানা পুলিশের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে পারে বলে পিবিআই সতর্কতা অবলম্বন করছে। পিবিআই পুলিশ সুপার এ বিষয়ে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরবর্তীতে জানানো হবে বিস্তারিত। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) পিবিআই পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে রানার কোন আপডেট তথ্য দেয়নি। বিমানবন্দরে আটকের পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পিবিআইয়ের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ওসমান পরিবার ও টিটুসহ সকল সহযোগীদের নানা অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে জানিয়েছে নির্ভরশীল সূত্র। যা যাচাই বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে এই সুত্র।

সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার শ্যালক অপরাধের মাষ্টারমাইন্ডার তানভীর আহমেদ টিটুর অত্যন্ত আস্থাভাজন ক্যাশিয়ার দুর্ধর্ষ কিলার অস্ত্র ভান্ডারের রক্ষক সেই এস এম রানা দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে আটকের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান, তার পরিবারের সকল সদস্য, কুখ্যাত অপরাধী শালক টিটু পালিয়ে যেতে পারলেও এই চক্রের অন্যতম ক্যাশিয়ার এসএম রানা পালাতে না পেরে বিসিরি সভাপতি ফারুক আহমেদের ছায়াতলে চলে যান।

টিটুর অপরাধ সাম্রাজ্যের অন্যতম ক্যাশিয়ার রানার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রহত্যা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করা, টিটু-ফজরআলী সিন্ডিকেটের সাথে মিলে ব্যাপক ভূমিদস্যুতা, অধিগ্রহণের হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও নয়-ছয়সহ করার বহু অভিযোগ রয়েছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) বিদেশে পালিয়ে পাওয়ার সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হত্যা মামলার আসামী ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের অঘোষিত কর্ণধার ড্রাইভার পুত্র যিনি ছিলেন সহ-সভাপতি, চিহ্নিত ভূমিদস্যু মাদার প্রিন্টের (ফেনসিডিল ব্যবসায়ী) মালিক এস.এম রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করার পর এসএম রানা কে ছাড়াতে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু বিদেশে পলাতক থেকেও নানাভাবে তদ্বির চালায়। টিটু তার অপকর্মের তথ্য ফাঁসের ভয়ে আছে।

বিমানবন্দরের সুত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার পথে এয়ারপোর্টে তাকে আটক করা হয়। পরে এয়ারপোর্ট থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এস.এম রানাকে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন নারায়ণগঞ্জ (পিবিআই)’তে পাঠানো হয়।

নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের অনেক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের সময় শামীম ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর সাথে গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে শতাধীক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ভূমিকায় মূখ্য অবস্থানে ছিলো এস.এম রানা। ওই সময় ক্লাবের সামনে থেকে রানার নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ ও ককলেট বিস্ফোরণ করা হয়।

এছাড়াও শামীম ওসমানের ভূমিদস্যু ও জায়গা-জমির দখলদারির সকল কাজ করাতেন তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর মাধ্যমে। আর এই তানভীর আহমেদ টিটু’র ভূমিদস্যুতার পার্টনাল ছিলেন এক সময়ের বাবার সাথে করতোয়া বাসের হেলপার থেকে পরবর্তীতে প্রিন্টের হেলপারী করা এস.এম রানা। ভূমিদস্যুতার পার্টনার বানিয়ে এস.এম রানাকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোর মধ্যে রেখেছেন তানভীর আহমেদ টিটু। এদিকে শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে গোগনগর পর্যন্ত ভূমিদস্যুতার জন্য মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরি করে রানা। আর এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলো নারায়ণগঞ্জের অন্যতম কুখ্যাত মাদক সম্রাট সালাউদ্দিন চৌধুরী বিটু।

বিটু নেতৃত্বেই পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা ও অসহায় মানুষের জায়গা-জমি দখল করতেন। এভাবেই শহীদনগর থেকে শুরু করে গোগনগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের জায়গা জমি দখল করেছেন রানা বাহিনী। আর এই সকল কাজের পার্টনার ছিলেন তানভীর আহমেদ টিটু।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে। কার্টনভর্তি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রানার নাম আসলেও তৎকালে শামীম ওসমান ও টিটুর ব্যাপক তদ্বিরে এই রানা রক্ষা পায়।

ওই ৪২ লাখ ঘুষকান্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমনকে আসামি করে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। বর্তমানে ওই দুর্নীতি মামলাটির সঠিক তদন্ত করলে থলের বেড়াল রানার নাম বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সকলে। ইতোমধ্যে বিগত দিনে রানার পক্ষ অবলম্বন করা দুদকের কর্মকর্তাবৃন্দসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওএসডিসহ বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলেও গডফাদার শামীম ওসমান ও মাষ্টারমাইন্ডার টিটুর ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।

বিগত ১৯ জুলাই এস.এম রানার নেতৃত্বে শহীদ নগর, আল-আমিন নগর, গোগনগর সহ বিভিন্ন এলাকার থেকে প্রায় শতাধীক ভাড়াটে বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায়। সেই হামলার সময় শতাধিক ভাড়াটে বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন এস.এম রানা। সেই অস্ত্র এখনও এস.এম রানার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে এস.এম রানা ভোল পাল্টে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহাম্মেদের পার্টনার সাজার চেষ্টা করে যা নিয়ে বিরূপ সমালোচনার ঝড় উঠে।

সম্প্রতি কয়েকটি টিভি চ্যানেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো এস.এম রানা বিসিবিতে অবাধ পদচারণা ও বিসিবির সভাপতির সঙ্গে সখ্যতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও গত ২৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান সহ ৪৭ নম্বর আসামী তালিকায় রয়েছে এস.এম রানা। কিন্তু গত ৬টি মাস হত্যা মামলার আসামী হয়েও বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ এর ছত্রছায়ায় ছিলেন রানা।

পাপের পাল্লা ভারী হওয়ার পর অস্ত্রের মহড়া দেয় টিটু। একই সাথে তার পার্টনার এস.এম রানাকেও দেখা গেছে অস্ত্রের মহড়ায়। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শামীম ওসমান ও তার শ্যালক টিটু। তবে দেশেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন টিটুর পার্টনার ঠান্ডা মাথার ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী রানা। বর্তমানে টিটুর সকল ব্যবসা জায়গা জমি দেখা শুনা করছেন এই রানা। বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলে এস.এম রানার বিরুদ্ধে অসংখ্য সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।

ড্রাইভার পুত্র হলেও এই এস.এম রানা বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলে পরিচয় দিত সাবেক নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক বিসিবির সাবেক পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সেক্রেটারী তানভীর আহাম্মেদ টিটুর পার্টনার। এমপির শ্যালকের ঘনিষ্ঠতায় গেল ১৫ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গিয়েছিল সে।

একসময় একটি ছাপাখানার হেলপার হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করলেও গত দেড় দশকে টিটুর ঘনিষ্টতায় সে যেন আলাদিন চেরাগ পেয়েছিল। ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সে শীতলক্ষ্যা, আল-আমিন নগর, শহীদনগর ও গোগনগর এলাকায় সৃষ্টি করেছিল ত্রাসের রাজত্ব। এমনকি বাগিয়ে নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদও।

এছাড়াও শামীম ওসমান ও শ্যালক টিটুর শেল্টার থাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ঘুষ কান্ডের মামলা থেকেও বেঁচে যায়। টিটুর ঘনিষ্টতায় বদলে যায় রানার ভাগ্য। ভূমিদস্যুতা, বালুমহল ইজারার নামে চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে রানা বনে যায় অঢেল অর্থের মালিক।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী আরও জানান, এসএম রানা নিরীহ মানুষের জায়গায় ছলেবলে সুকৌশলে বায়না করে কদমতলী এলাকায় মাদার প্রিন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করে ভয় ভীতি দেখিয়ে মানুষের জায়গা জমি হাতিয়ে নিত। গত ৫ বছর আগে মাদার প্রিন্টের ব্যবহৃত গাড়িসহ ৪শ বোতল ফেন্সিডিল নিয়ে প্রশাসনের কাছে আটক হয় রানার ছোট ভাই এস.এম মাসুদ। বর্তমানে তার ভাই মাসুদ দুবাইয়ে পলাতক।

বিশেষ করে বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই সকল ভূমি মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল রানা। এছাড়া যাদের জায়গা বাড়ি-ঘর একোয়ার হয়নি তাদেরকেও খবর দিয়ে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ওই জায়গা সরকার একোয়ার করে নিবে এবং একোয়ার থেকে রানা তাদেরকে উদ্ধার করে এমন কথা বলেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল রানার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ওয়ারিশের থেকে জমি বায়না করে সেই জমি দখল করে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে এস এম রানা। এহের কাজে রানার সহযোগিতায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের একটি অসাধু চক্র ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। তারা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আর এই সিন্ডিকেটের শেল্টারদাতা ছিল শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটু।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন