নাঃগঞ্জ মহানগরীতে ছিনতাই বাড়ছে

কিশোরগ্যাং ও মাদক বিক্রেতারা পেয়েছে নতুন শেল্টার

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০০:৫৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কিশোরগ্যাং ও মাদক বিক্রেতারা পেয়েছে নতুন শেল্টার

নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা দুই অঞ্চলেই হঠাৎ ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়েছে। বনশ্রী এলাকায় গুলি করে ব্যবসায়ির ২০০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনাটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সরকারের ইমেজও কিছুটা ক্ষুন্ন হচ্ছে এ ঘটনায়। ছিনতাইকারীদের রুখতে গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) থেকে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট মাঠে নেমেছে। সরকার আশা করছে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।

ছিনতাইরোধে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট মাঠে নামবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজশাহীর প্রাইমারি ট্রেনিং সেন্টারে 'দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা'য় অংশ নেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, "রাত্রিকালে ছিনতাই বেড়েছে। দিনেও ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে সোমবার সকাল থেকে বিশেষ একটি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিট যৌথ অভিযান করবে।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জে বিকাশ এজেন্টের পৌণে ৩ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনায় তেমন কোন অগ্রগতি নেই। এজেন্ট শাহজামান তার টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কামতাল এলাকায় প্রবাসীর ২৫ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনারও ফলাফল শূণ্য। পুলিশ কয়েকজন অপরাধী গ্রেফতার করে সাফল্য দেখাতে চাইলেও মূল অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে ছিনতাইকারীর উপদ্রব বেড়েছে আশংকাজনকহারে।

বিবি রোডের মন্ডলপাড়া ব্রিজ এলাকা, ডিআইটি মার্কেট, চুনকা পাঠাগার , ২নং রেলগেইট, কালিরবাজার মোড়, চাষাড়া নুরমসজিদ পয়েন্ট, আমলাপাড়া, সায়ামপ্লাজা, চাষাড়া গোলচত্বর, চাষাড়া রেললাইন, ডাকবাংলো মোড়, জামতলা, অক্টোঅফিস, মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থান, গাবতলী, টাগাড়পাড়, পঞ্চবটি কলোনী ও আশপাশ এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে।

শহরের বোদ্ধামহলের বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেশাখোরদের আড্ডাস্থল জমজমাট। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিশোর গ্যাং ও মাদক বিক্রেতাদের শেল্টার বদলেছে। কিশোর গ্যাং ও মাদক বিক্রেতা বদলায়নি। ওরা নতুন নেতাদের আশ্রয়ে ফের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। যার দরুন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।

শহরের ১নং বাবুরাইল, জল্লারপাড়, পাইকপাড়া পুল ও নয়াপাড়া এলাকার কয়েকজন সমাজ সচেতন বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এই এলাকায় অপরাধী ও মাদকের ডিলারদের ব্যবসায়িকভাবে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। প্রশ্রয়দাতার কমান্ডেউ সবকিছু হচ্ছে। তাদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থের পাওয়ার আছে। আমরা সবকিছু জেনেও মুখ খুলতে পারিনা। মুখ খুললে হয়তো রাস্তায় আমাকে মুখ বেধে কোন ক্রিমিন্যাল কুপিয়ে ফেলে রাখবে। সবাই বলবে ছিনতাইকারী কুপিয়েছে। কেউ জানবেনা এটা কোন কমান্ডের অপকর্ম।

শহরের উত্তর চাষাড়া, খানপুর ও তল্লা এলাকার লোকজনের অভিযোগ, ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও জনগণ শান্তি পায়নি। এখনো সন্ধ্যার পর নবীগঞ্জ ঘাট, হাজীগঞ্জ মোড়, তল্লার নতুন সড়ক, চাঁনমারী এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে। নতুন সড়কটিতে যানবাহন ও মানুষ চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় অটো গাড়ির যাত্রী সেজে ছিনতাইকারীরা ঘুরে বেড়ায়। মোক্ষম সময় পেলেই শিকার ধরে। যখন কোন নিরীহ ব্যক্তির উপর আক্রমণ করা হয় তখন আশপাশের লোকজন দেখেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া লোকটিকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনা।

 

জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে শাহ জামান নামের এক বিকাশ এজেন্টের নগদ পৌনে তিন লাখ টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ এবং ফ্ল্যাক্সি লোডের ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়েছে। ২০ জানুয়ারি দিবাগত রাত একটায় সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া এলাকায় আমজাদ মার্কেটের পশ্চিমে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

মিজমিজি দক্ষিণপাড়ায় আমজাদ মার্কেট সংলগ্ন কাসেম আলী মসজিদের পাশে বিসমিল্লাহ টেলিকম নামে বিকাশ ফেক্সি লোডের একটি দোকান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন শাহ জামান। প্রতিদিনের মতো ২০ জানুয়ারী রাতে দোকান বন্ধ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ এক ছিনতাইকারী দোকানের সামনে এসে জামানকে আঘাত করে তার হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রাকের হেলপারকে মারধর করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কৃষকদলের ৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকায় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ১৫ অক্টোবর বিকেলে গ্রেফতারকৃতদের র‌্যাব সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

এর আগে মারধরের শিকার ট্রাকের হেলপার নুর হোসেন বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করলে থানা পুলিশের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতার অভিযানে নামে র‌্যাব-১১। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জের বাজার এলাকার মো. রুবেল (৩৪), মো. সোহেল রানা (৪১), তার ছোট ভাই জুয়েল রানা (২২) ও সাদিকুল ইসলাম সুজন। তাদের সবার বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুর (হারানো পুকুরপাড়) এলাকায়।

 

জানা গেছে, গ্রেতারকৃতদের মধ্যে সাদিকুল ইসলাম সুজন ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষকদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, মো. সোহেল রানা সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জুয়েল রানা সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও মো. রুবেল সাবেক কৃষকদল কর্মী।

মামলায় বাদী নূর হোসেন উল্লেখ করেন, ট্রাকের চালক হাসানের সঙ্গে হেলপার হিসেবে কাজ করেন তিনি। গত কয়েকদিন আগে সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকায় মোহর চাঁন প্রধানের চার তলা বাড়ির সামনে তাদের ট্রাক বিকল হয়ে যায়। এরপর ২/৩ দিন ধরে সেখানে ট্রাকটি (ঢাকা-মেট্টো-ট-১৮২৭৭১) রাস্তার পাশে পার্কিং করা ছিল। নূর হোসেন ট্রাকটি পাহারা দিতে রাতে ট্রাকের ভেতরেই ঘুমাতেন।

১৩ অক্টোবর রাত পৌনে ১২টার দিকে ছিনতাইকারী রুবেল ও জুয়েল রানা ট্রাকের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে ডেকে তোলে। ঘুমের ঘোরে তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই রুবেল তাকে ঝাপটে ধরে এবং জুয়েল রানা সিটের পেছনে থাকা ব্যাগ থেকে ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের সহযোগী অপর ছিনতাইকারী সাদেকুল ইসলাম সুজন চালকের সিটের সামনে ড্রয়ারে থাকা চালক হাসানের ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র, মানিব্যাগ ও ব্যাংকের ডেবিট কার্ড নিয়ে যায়। পরে হেলপার নূর হোসেনকে লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে চলে যায় উল্লেখিত ছিনতাইকারীরা।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন