দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নাঃগঞ্জে সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে
‘নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন’ এর খবর নেই
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ০০:০৩, ২৪ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ০০:২৭, ২৫ মার্চ ২০২৫

নতুন বছরের শুরুতেই গডফাদার মুক্ত সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ার দীপ্ত শপথ নিয়েছে ‘নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন’। সদ্য গঠিত এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর অধিকার আদায়ে কাজ করবে। সংগঠনের ব্যনারে একত্রিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, নারায়ণগঞ্জ আমাদের মা, আমাদের মাকে বাঁচাতে হবে। বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে দিয়ে আন্দোলন করে গডফাদারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই লড়াই সরকারের বিরুদ্ধেও হয়েছে। এখন সেই সরকার না থাকলেও অবস্থা একই আছে। তাই আমাদের সকলের আওয়াজ তোলা জরুরি। শুধু আমার বা আপনার নয়, আমাদের সকলের একসাথে আওয়াজ তোলা জরুরি। তাই এই সংগঠনটা সামনে আনা।
কিন্তু সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের পর কয়েক মাস পার হল-কোন কার্যক্রম নাগরিক সমাজের চোখে পড়েনি। অথচ সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জের বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সংগঠনটি আশা জাগিয়ে ছিল। বিশেষ করে শহরবাসী ভেবেছিল অন্তত একটি সংগঠন আমরা পেলাম যে, শহরের মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলবে। প্রশাসনের মুখোমুখি হবে। এতেকরে জনগণের উপকার হবে। যেমন এই মূহুর্তে শহরে মোটাদাগে দু’টি সমস্যা সবার চোখে পড়ছে। এক চাষাড়ার পুলিশ ফাঁড়ি ও ডাকবাংলো ভবনটি ভেঙ্গে রাস্তা প্রশস্ত করা জরুরী। এ বিষয়ে কেউ উঁচু গলায় কথা বলছেনা।
বিশ্লেষকরা মনে করেছিল, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও পরিবর্তন আসুক। এ নিয়ে নাগরিকসমাজ শুরুতেই সোচ্চার হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। সামান্যতম ফাঁক-ফোকরও ধরা পড়ছে। যেমন সরকারের ৫টি বড় প্রকল্প সম্পর্কে এনসিসি’র অংশীজন সম্পৃক্তকরণ সভায় অবগত করায় নাগরিক সমাজ এর নেতিবাচক দিকগুলো জানতে পেরেছেন। অংশীজন সভা না ডাকলে শহরবাসী কিছুই টের পেতোনা।
নাগরিকসমাজ প্রতিটি মৌলিক বিষয় সামনে তুলে আনছেন। এতেকরে নারায়ণগঞ্জবাসীর সামনে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতির সংস্কারের ছলে অতি প্রতিবাদি চরিত্র ধারণ করে নারায়ণগঞ্জে কোন নতুন গডফাদারের উত্থান ঘটুক-এমনটা কেউ চায়না। এদিকটাতেও সবাই সদা সতর্ক। জেলার সার্বিক সমস্যা-সুবিধার দিকগুলো নিয়ে যাতে কোনো মহলের পক্ষ থেকেই যেনো আগের ন্যায় লুকোচুরি না হয় সেদিকটা নিশ্চিত করতেই নাগরিক সমাজ জেগে উঠেছে।
জেলার নাগরিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে মতবিনিময় সভা করেছিল ‘নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন’ সংগঠন। নগরীর আলী আহমেদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেছিলেন, আমরা সবাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই। এই জেলার দূর্বৃত্তদের জন্য নারায়ণগঞ্জ সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে পারেনি। তাদের জন্য আমাদের সন্তানকে হারাতে হয়েছে। আজ সমগ্র নারায়ণগঞ্জ ভেঙে পড়েছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ হাজারো সমস্যা জর্জরিত। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের একত্র হতে হবে। আমরা যে পরিমান রাজস্ব দেই সেই পরিমাণে উন্নয়ন চাই।
তিনি আরও বলেন, ডিসি, এসপি ও সিভিল সার্জন নিজের কাজ করলে এমনি সব সমস্য সমাধান হয়ে যায়। এক গডফাদার গেছে আরেকজন যেন না হয়। ওসমান পরিবারের কাছে নারায়নগঞ্জের কাছে জিম্মি ছিল। মেয়র আইভী আওয়ামীলীগ হলেও সে গডফাদারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। কিন্তু তাও তাকে নিয়ে সেলিম ওসমানের সাথে মিশিয়ে ফেলছে।
সভাপতির বক্তব্য সংগঠনের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছিলেন, কিছুদিন আগে এনসিসিতে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এখানে কদম রসূল সেতু, খানপুরের পোর্ট কন্টেইনার, পঞ্চবটি থেকে উড়াল সেতুর কাজের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও এ শহরের সকল সমস্যাগুলো হয়েছে কারণ এখানে একটি অপরিকল্পিত নগরায়নের মধ্যে আমরা বাস করছি। এই প্রকল্পগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এরে আরো এই মহানগরী কলাপস করবে। শুধু আমার বা আপনার নয়, আমাদের সকলের একসাথে আওয়াজ তোলা জরুরি। তাই এই সংগঠনটা আনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেছিলেন, আমরা আমাদের সমস্যাগুলো বিগত সময়ে অনেক বলেছি। আমরা জানি ফুটপাত কারা দখল করে আছে। বিভিন্ন হাসপাতাল, শপিংমল থেকে কারা ফুটপাতে পার্কিং করে। এই নারায়ণগঞ্জের শহরে বসবাসরত সকল মানুষের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত। আমরা বিভিন্ন সংগঠন যার যার মতো সংগ্রাম করেও সরকার হটাতে পারিনি। কিন্তু ওই ছাত্রদের আহ্বানে যখন আমরা নেমেছি তখন পেরেছি। আমাদের সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সামসুল আলম আজাদ বলেছিলেন, বিগত ২১ বছর ধরে আমি নারায়ণগঞ্জ আসি কাজের কারণে। অনেকেই সকালে ঢাকা থেকে আসে, আবার সন্ধ্যায় চলে যায় একটা অতিথি পাখির মত। নারায়ণগঞ্জ বিশাল ঘনবসতি। বিপ্লবের পরবর্তী সময়ের পর মানুষদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবিক অর্থে রূপ নেয়নি। আমাদের সকল দিক বিবেচনা করে কাজ করতে হবে।
জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেছিলেন, দুর্বৃত্তের ২টি রূপ। একটা চাঁদাবাজি করে আরেকটা শীতলক্ষা নদী শোষন করে। লক্ষী নারায়ণ্যের কি করুন অবস্থা হয়েছে তা আমি দেখেছি। যারা এই লক্ষীনারায়ণ নিয়ে নানা অত্যাচার করেছে তারা এতদিন ৪-আসনের এমপির শ্যালকের বন্ধু ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর এখন তারা বিএনপিকে অর্গানাইজ করছে। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা আগের মতই আছে। এখানের এসপি নিজেকে পাবলিক সার্ভেন্ট মনে করে না।
এনসিসির সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করার সদিচ্ছা সবার আছে। কিন্তু সেটাকে একত্র করার আয়োজন একটি ঘাটতি ছিলো। কিছুদিন আগে ডিসির অফিসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মিটিং হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের ৩-৪ টা রাস্তা একভাবে যেন জোর করে আটকে রেখেছে।
নারায়ণগঞ্জ খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী সে সভায় বলেন, সমাজে এত রক্তক্ষয়ী মধ্য দিয়ে একটা স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু এখন যারা আছে তাদের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে এটাই আমরা ধারণা করছি। নারায়ণগঞ্জের নানা সংগঠন নানা সংগ্রাম করেছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। বিশেষ করে ত্বকী হত্যার পর নারায়ণগঞ্জের মানুষ সারা দেশে আলোড়ন করেছে। এই বিপ্লবী সরকার যদি বিপ্লবী পরিবর্তন করত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তাদের কাছে কিছু আশা করা কঠিন ব্যাপার। আজ এই সংগঠনের মধ্যে দিয়ে যদি সবাই সম্পৃক্ত হই তাহলে একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে পারবো।
এনসিসির ট্রান্সপোর্ট প্লানার ফাহাদ বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের ট্রাসনপোর্টের জন্য বিভিন্ন প্ল্যান রয়েছে। তারা বলছে তারা আরেকটা টার্মিনাল করবে। যেখানে আই জায়গায় ২ কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটা টার্মিনাল আছে। সেই টার্মিনালটার ১০ শতাংশ পর্যন্তা এখনো তারা ইউটিলাইজ করতে পারেনি কিন্তু নতুন প্রকল্প এনেছে। আমরা ভিজিট করতে গিয়েছিলাম, আমরা দেখেছি সেখানে ২ মাসের মধ্যে ১ টা জাহাজ এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। একটা সমস্যা তো রাতারাতি সমাধান হবে না তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সারাদেশেই গণতন্ত্রের চর্চা বাড়ছে। যে কেউ বা যে কোন সংগঠন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নাগরিকসমাজকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিটাই সবাই কামনা করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল সমস্যা ও এডভান্টেজগুলো নিয়ে সবাই মিলে কাজ করতে চায়। সবাই সে কাজে সম্পৃক্ত থাক বা না থাক অন্তত কাজ যে হচ্ছে সে বিসয়টা যাতে জানা থাকে। সার্বিকভাবে বলা যায়, আগামী দিনগুলোতে পুর্বের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে যাতে কোন গডফাদার তৈরী না হয়-এমনটাই সবার কাম্য।