পড়াশোনার ফাঁকে মৌলিক দাবি নিয়ে নাঃগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করছে

নাঃগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনের গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছে

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ০০:৪১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ০০:৫৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

নাঃগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনের গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছে

একটি অবহেলিত ইস্যুতে আন্দোলন করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা গণআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক জঞ্জাল দূর করে দেশে একটি ইতিবাচক নতুন প্রেক্ষাপট তৈরী করে দেশবাসীকে অভিভূত করে দিয়েছেন। প্রাচ্যেরডান্ডি রাজনীতির সূতিকাগার নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের অন্তরেরও অন্ত:স্থলে ঠাঁই পেয়েছে ছাত্র সমাজ। পরিণত রাজনীতিবিদদের চোখে যারা শুধুই অপরিণত অপরিপক্ক রাজনীতিবিদদের চোখে অপরিণত অপরিপক্ক ছাত্রসমাজই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করে দিলেন বুকের তাজা রক্ত অকাতরে রাজপথে বিলিয়ে দিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানই  বেশি চোখে পড়ে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নিজেদের পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মৌলিক দাবিগুলো নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বিএনপি-জামায়াতসহ সহযোগী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় তাদের কর্মকান্ডের পরিধি আকারে ছোট। তবুও ছাত্র সমাজের তরুণকর্মীরা নবউদ্যমে দেশ গড়ার কাজে মাঠে কাজ করছেন। এই কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি আরো বাড়াতে হবে।

রাজনৈতিক  বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রসমাজ যেভাবে দেশে পরিবর্তন এনেছে সেভাবে না হলেও অন্তত নিয়মিত নারায়ণগঞ্জের মৌলিক ইস্যু নিয়ে তাদের কাজ করার সময় এখুনি। বিভিন্ন সেক্টরে সরাসরি হয়তো ছাত্রসমাজ অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা-কিন্তু বড় বড় সেক্টরগুলোতে তারা নজরদারি করার অধিকার রাখে। পুরনো কাঠামোটা যে ভাল মঙ্গলজনক ছিলনা তাতো আন্দোলনেই পুলিশের গুলি খেয়ে ছাত্রসমাজ প্রমাণ করে দিয়েছে।

যেমন ব্যবসায়িক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রসমাজকে সম্পৃক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়। বিকেএমইএতে সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনের পুরনো কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাইদের প্রভাব এখনো রয়েছে বলে ব্যবসায়ী নেতারাই মাথা ঠুকে থাকে। এখানে ছাত্রসমাজের নজরদারি থাকলে কোন প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ কোন ধরনের রহস্যময় কারিশমা চলবেনা। বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন এর নির্বাচন চলছে। এখানে চিরাচরিতভাবে সেই দুই গ্রুপ নির্বাচন করছে। একটি গ্রুপ বিএনপি নেতার নেতৃত্বাধীন। আরেকটি বিএনপি বি টিম অনুগতদের মিক্সচার গ্রুপ। অনেকটা সাজানো টাইপের। আওয়ামীলীগ জাপা মাঠে নেই। মাঠ ফাঁকা। ফাঁকা মাঠে শুধুমাত্র বিএনপি লোকজন নানা সংগঠনের নেতৃত্ব করায়ত্ব করার মিশনে নেমেছে।

একক কর্তৃত্ব কোন একটি রাজনৈতিক দল হাসিল করতে গেলেই সমাজে সমস্যার উদ্ভব। নারায়ণগঞ্জে এই সমস্যা আরো প্রকট। এই চর্চা থেকেই গডফাদার তৈরী হয়। তখন দেখাযায় একজন রাজনৈতিক রাতারাতি গডফাদার হওয়ার নেশায় স্বৈরাচারি আচরণ শুরু করেন। লিপ্ত হন অপকর্মে। রাজনীতি থেকে এই অপসংস্কৃতি দূর করতেই ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে দেশকে মুক্ত স্বাধীন করেছে।

সাধারণ মানুষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বরাবরই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গত কয়েকদিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেছেন, জেলা শহর নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সেক্টরে ছাত্রনেতাদের সম্পৃক্ত হওয়া জরুরী। তাহলে বিভিন্ন সেক্টরের অনিয়ম, সমস্যা বৈষম্যগুলো তরুণ নেতারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিহ্নিত করতে পারবে। ধীরে ধীরে বৈষম্যগুলোও দূর করতে পারবে।

বর্তমান সময়ে আমাদের শহরে মূল সমস্যা হল হকার যানজট। যানজটের কারণে শহর স্থবির হয়ে পড়ছে প্রতিদিন। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে বের হতে চাষাড়া মোড়ে যানজটের ফাঁদে আটকা পড়ে। চারদিকের গাড়ি আসায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট এমনিতেই পেরিয়ে যায়। যানজটের কারণ অনেক। মূল কারণ আপাতত দুটি। প্রথমত বঙ্গবন্ধু সড়কে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ চলছে। দ্বিতীয়ত ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান। মুন্সীগঞ্জের যানবাহন নারায়ণগঞ্জ শহরের উপর দিয়ে চলাচল করে। দুটি কারণে সংকীর্ণ রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সেই চাপের ফসল নিত্য যানজট।

এমন জটিল সমস্যা সমাধানে আপামর নারায়ণগঞ্জবাসী চাইছে ছাত্র নেতারা সম্পৃক্ত হোক। ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ফের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যা ট্রাফিক পুলিশ পারছেনা। পুলিশের কন্ট্রোল পাওয়ার কমে গেছে। পুলিশকে মানুষ মানতে চায়না। এক্ষেত্রে ভাল কাজ করতে পারে ছাত্র নেতৃবৃন্দ।

জুলাই গণহত্যার বিচার, শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, আহতদের সুচিকিৎসা পুনর্বাসনের দাবি শুধুমাত্র একটি দাবিই নয় এটি সমাজে ন্যায়বিচার ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ছাত্র সমাবেশ ¨vwj সফল করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশন এর  কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯ জানুয়ারী। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনার সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা মশিউর রহমান খান রিচার্ড। সভার শুরতে লড়াই সংগ্রামের সকল শহিদদের স্মরণে মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ তৈরীর প্রথম ধাক্কা। ধাক্কায় যাদের জীবন গেছে,যারা এখনো মৃত্যুর সাথে লড়ছে তাদের সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত না হলে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রুপ নেবে না।

জুলাই গণহত্যার বিচার, শহীদদের পূর্ণাঙ্গ  তালিকা,আহতদের সুচিকিৎসা পুনর্বাসনের দাবি শুধুমাত্র একটি দাবিই নয় বরং এটি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। এই দাবি বাস্তবায়নে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য এবং ৩১ জানুয়ারির ছাত্র সমাবেশ ্যালী সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছি। এই আন্দোলনে যাদের আত্মত্যাগের ফলে এই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে এবং ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদীর পতন ঘটেছে, আমাদের উচিৎ সেসকল  আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করা।

নতুবা, এই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব না! আমরা দেখবো অভ্যুত্থানের পর মাস অতিক্রম হয়ে গেলেও এখনো এই আন্দোলনের সকল শহীদ এবং আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশিত হয়নি! শহীদ পরিবারকে এখনো নানান দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

আমরা দেখবো শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমরা অঞ্চলগুলোতে যেই স্মৃতিস্মারক নির্মান করার কথা বলে আসছি তার কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না! আমরা আরো জোড় দাবি জানিয়ে আসছি আহতদের সুচিকিৎসা এবং পূণর্বাসন নিশ্চিত করার। এবং আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত সকল সরকারী, প্রশাসনিক ব্যক্তিসহ সকল দোষীদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা।

আমরা দেখবো, এই মাসেও এই দাবীগুলোর কোনো যথাযথ দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না! অতএব, আমরা বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন থেকে ৩১ জানুয়ারীর মহা ছাত্রসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই বর্তমান অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারকে স্পষ্টভাবে হুশিয়ার করতে চাই।

আমরা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের পক্ষের সরকার হিসেবে তাদের প্রধান কাজগুলো এগুলোই হওয়ার কথা ছিলো যা বাস্তবায়নে তারা এখনো অবদি অক্ষম হয়েছে। ফলে দ্রুততম সময়ে যদি তারা এসকল কাজের বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে তারাও অভ্যুত্থানের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করবে। আগামী ৩১ তারিখের এই ছাত্রসমাবেশ অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন