জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান

`আগামীর বাংলাদেশ ছাত্রদের হাতে তুলে দিব’

বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :

প্রকাশ: ১৭:২৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৫৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

`আগামীর বাংলাদেশ ছাত্রদের হাতে তুলে দিব’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও দেশের মধ্যে উসকানি দিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। মুক্তিপাগল মানুষ এসব সহ্য করবে না। উস্কানির ফলে বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার দায়ভার সম্পূর্ণ উস্কানিদাতার। এ সময় জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের যত টাকা চুরি-ডাকাতি ও লুট করে বিদেশে পাচার করেছে তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সে টাকা জনগণের উন্নয়ন কাজে ব্যায় করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জবাসী যুগ যুগ ধরে কষ্টে আছেন। নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রেখেছিল। সেই গডফাদার শামীম ওসমান এখন কোথায়? নারায়ণগঞ্জে বিশাল জনসভায় শামীম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জের ‘গডফাদার বলে উল্লেখ করেছেন জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জনসভায় নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার কোথায়? যিনি আমাদের একজন আমিরকে বলেছিলেন তার প্রবেশ নিষেধ। সাইনবোর্ডও টানিয়ে রেখেছিলেন।

গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকার ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

 ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সেই গডফাদার একটি সভায় ডিসি-এসপিকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমার নামে অগ্রিম মামলা করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আযমকে হত্যা করতে চাই।’ অধ্যাপক গোলাম আযম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু গডফাদারের সুযোগ হয়নি খুন করার।

তিনি আরও বলেন, অহংকার ভালো জিনিস নয়। দুনিয়াতেই করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। আজ সেই গডফাদার কোথায় আছেন। নারায়ণগঞ্জবাসী যুগ যুগ ধরে কষ্টে আছেন। নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রেখেছিল। আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াদাবদ্ধ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের দলের কোন কর্মী কারো ইজ্জত নিয়েছে কিম্বা কারো সম্পদ লুট করেছে কোন দূর্নীতি করেছে- এমন কোন অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান আমরা তার বিচার করবো। ইনশা আল্লাহ এমন কোন অভিযোগ জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের বিরুদ্ধে নেই। থাকবেও না। আমরা ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করি। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর বুকভরা ভালোবাসা চাই। বুকে একটু যায়গা চাই। আমরা অন্যায় করলে আমাদের বিচার করবেন।

তিনি বিশেষভাবে বলেন, ছাত্রদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। আমরা বলতে চাই ছাত্রদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে জামায়াত ওয়াদাবদ্ধ। আমরা একসাথে লড়াই করবো। আগামীর বাংলাদেশ আমরা ছাত্রদের হাতে তুলে দিব। আমরা ছাত্রদের পেছনে থাকবো। দেশ এগিয়ে নিবে ছাত্ররা। বাংলাদেশ হবে মানবিক বাংলাদেশ।

ডা. শফিকুর রহমান  আরও বলেন, গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা সবাই বাঙ্গালী। কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে তা এখনো চলমান রয়েছে। এখনো ওইখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তারা এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতোদিন থাকবে ততোদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশের একজন নাগরিকের সব অধিকার পাওয়ার অধিকার আছে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আমাদের এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন। আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। প্রশাসনকে, বিচার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ পুরোদমে ধ্বংস করে দিয়েছে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাবেক আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, জেলা আমির মমিনুল হক সরকার ও মহানগরী আমির মুহাম্মদ আবদুল জব্বারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

প্রায় চার দশক পর নারায়ণগঞ্জ শহরের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর জনসভা নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকেই শহরের ইসদাইর এলাকায় ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে যায় জনসাধারণের উপস্থিতি।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ঢাকা থেকে আলাদা হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে খোলা মাঠে জনসমাবেশ করা হয়নি। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় শেষ পর্যন্ত করতে পারেনি জামায়াত। ২০০২ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে কর্মীসভায় তৎকালীন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এলেও প্রকাশ্যে কোনো সভা করার সুযোগ হয়নি। এর আগে জামায়াতের তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আজমের নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার কথা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শামীম ওসমান।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন