ঝুট সেক্টর ফের অশান্ত, ফতুল্লায় মাসে ৫০ কোটি টাকার ঝুট ব্যবসা
নাঃগঞ্জে ঝুট সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে এলাকাবাসীর চ্যালেঞ্জ
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ২৩:১৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নাঃগঞ্জে বিসিকের ঝুট সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে এই প্রথম এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের কথা প্রকাশ করলেন। বৃহত্তর এনায়েতনগর, মাসদাইর, বারৈভোগ, ভোলাইল, শাসনগাঁ এবং আশপাশ এলাকার বঞ্চিত লোকজন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপি’র নামে উড়ে এসে ঈগল পাখির মত ছো মেরে কোন নেতা বা সন্ত্রাসীকে ঝুট ছিনিয়ে নিতে দেয়া হবেনা। আমরা ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত এলাকাবাসী মিলেমিশে ঝুট ব্যবসা করবো। কোন ভাইয়ের নাম ভাঙ্গানো চলবেনা। কোন সন্ত্রাসীগিরী চলবেনা। আমরা এলাকার লোক আমাদের অধিকার বেশি।’
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, বিসিক শিল্পনগরীতে ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই গ্রুপের মহড়ার সংবাদে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সেনাবাহিনীর ও ফতুল্লা থানা পুলিশ। সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উভয় গ্রুপের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে ৮ শতাধিক রফতানিমুখী পোশাক কারখানায় ১৫ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। অধিকাংশ পোশাক কারখানা ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত। বিকেএমইএ নেতাদের মতে, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার ঝুট (গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ) ব্যবসা হয়। ৫ আগস্টের পর সরকার পতনের পর থেকে ফতুল্লা বিসিক ও আশপাশ এলাকায় ঝুট (গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ) সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সবারই রাজনৈতিক শেল্টারদাতা হিসেবে বিএনপি’র নাম ভাঙ্গায়।
মাসদাইর, শাসনগাঁ এবং আশপাশ এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি থাকাকালীন সময়ে মশিউর রহমান রনি, এড. আলমগীর ও বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর বিসিক এর ঝুট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অন্তর্র্বতীকালিন সরকার শপথ নেয়ার পর থেকেই গিয়াসউদ্দিন সমর্থিত রনি, আলমগীর ও বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর বিসিক এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামাতে শুরু করে। ঝুট সেক্টর থেকে বাদ পড়া বিএনপি’র অপর গ্রুপটি বিদ্রোহী হয়ে উঠে। বিসিকে কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়েছে।
সম্প্রতি অনৈতিকতার অভিযোগে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র মূল দায়িত্ব থেকে অপসারিত হন। বর্তমানে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এই সুযোগে বিএনপি’র বিদ্রোহী গ্রুপটি সাথে নিয়ে মাসদাইর, ভোলাইল, শাসনগাঁও এবং আশপাশ এলাকাবাসী গিয়াসউদ্দিন সমর্থিত রনি, আলমগীর ও বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর গ্রুপকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই পঞ্চবটি বিসিক, মাসদাইর, বারৈভোগ ও আশপাশ এলাকায় গ্যাঞ্জাম চলছে।
গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারী বারৈভোগে ফকিরা গার্মেন্টস এর ঝুট নামাতে যায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন এর সমর্থনপুষ্ট রনি, আলমগীর ও বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর গ্রুপ। এলাকাবাসী ফকিরা গার্মেন্টস এর গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। মশিউর রহমান রনি গ্রুপের লোকজন জড়ো হতে থাকে। ফলে পুরো বিসিক এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য সেনাবাহিনীর সাহায্য কামনা করা হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফকিরা গার্মেন্টস এলাকায় আসে। ফলে বড় ধরনের কোন সংঘর্ষ থেকে সকলেই রক্ষা পেল।
বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ফকির এ্যাপারেলসের ঝুট সেক্টর দখল নিতে একাধিক গ্রুপ দৌড়ঝাঁপ করলেও এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে ঝুট নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এড এসএম মাহমুদুল হক আলমগীরের উপর দায়িত্ব ভার আসে।
আলমগীরের নামে ডিউ কেটে ঝুট নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে লাভের অংশের টাকা বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বন্টন করে দেয়। মঙ্গলবার ফকির গামেন্টের ঝুট নামার সংবাদে বিভিন্ন এলাকার বিএনপির লোকজন সকাল বেলা বিসিক শিল্পনগরীতে জড়ো হয়।
পরে তারা বিসিক শিল্পনগরীতে মহড়া দিয়ে জানান দেয় ফকিরের ঝুট তারা নামাবে। তাদের আগমনের সংবাদে এড: আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিসিক শিল্পনগরীতে জড়ো হয়। এলাকাবাসী ও এড. আলমগীর গ্রুপের লোকজন আলাদা ভাবে মহড়া দেয়। দুই গ্রুপের মহড়ায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদ বলেন, বিসিক শিল্পনগরীটা আমাদের এলাকায় অবস্থিত। আমাদের এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। ফকির গামেন্ট একটি বিশাল ফ্যাক্টরী।
এই কারখানার ঝুট আমাদের এলাকার লোকজন নিবে, এটা আমাদের পাপ্য। বাহিরের লোক এসে ঝুট নিয়ে যাবে এটা আমরা মেনে নিবো না। যার কারনে আমাদের এলাকার সবাইকে নিয়ে বিসিকে অবস্থান নিয়েছি।
তবে, এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এড. আলমগীর বলেন, বিসিক শিল্পনগরীটি এনায়েতনগর ইউনিয়নে অবস্থিত। আমাদের ইউনিয়নের সকল নেতাকর্মী নিয়ে কারখানার মালিকের কাছ থেকে বৈধ ভাবে ক্রয় করে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেই। আর লাভের টাকা রাসেল মাহমুদ সহ সকল নেতাকর্মীদের মাঝে বন্টন করা হয়। কাউকে বঞ্চিত করা হয় না।
গত কয়েকদিন আগেও রাসেল মাহমুদ স্বাক্ষর করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। আর আমরা যার কাছে ঝুট বিক্রি করি যুবদল নেতা রতনের কাছে চাঁদা দাবি করে রাসেল মাহমুদ। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় রাসেল তার লোকবল নিয়ে বিসিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। রাসেল দলের নাম ভেঙে বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসের ঝুট ও নিটিং এর ওয়েস্টিজ মাল নামায়। বিসিক শিল্পনগরীতে কেউ যদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার চেষ্টা করে তা কিছুতেই মেনে নিবো না।
জুলাই ও আগস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া দফায় দফায় কারফিউ ও সাধারণ ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের পোশাকশিল্প কারখানা। ব্যবসায়ী সংগঠনের তথ্য মতে, এ সময়ে বন্ধ থাকায় পোশাক রফতানি খাতে ২.০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সরকার পতনের পর ঝুট ব্যবসার দখল নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এ কারণে হুমকির মুখে কারখানা মালিকরা। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঝুট ও ওয়েস্টেজ ব্যবসা দখলে নিতে সন্ত্রাসী চক্র তৎপর হয়েছে। বেড়েছে চাঁদাবাজি, চলছে গোডাউন দখলের পাঁয়তারা।
নিটওয়্যার খাতের ৪৭ শতাংশ তৈরি পোশাক রফতানি হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। আর পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ জেলার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তবে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারফিউ ও টানা ছুটির কারণে বিপর্যয় নেমে আসে জেলার এ শিল্পে।
এদিকে স্থানীয়রা জানায়, বিসিকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ঝুট (গার্মেন্টস ওয়েস্টেজ) বাণিজ্য হয়। গত ১৬ বছর ধরে এই বাণিজ্য আওয়ামীলীগ ও তাদের সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির অংগসংগঠনের নেতারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এই ঝুট ব্যবসা দখল করতে মাঠে নামেন।
এদিকে, গত ২৯ আগস্ট দুপুর ১২টায় বিসিক ২ নম্বর গেইটে ডান পাশের ৩ নম্বার গলিতে ‘মার্টিন নিট ওয়্যার, বিশাল নিট ওয়্যার’ এর সামনে ওই ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের প্রায় ১০-১২জন আহত হয়। আহতরা হলেন, শ্রমিক রিয়াজ (১৮), দোকানদার শাহাদাত (৩০), শ্রমিক রাকিব (১৮), সিয়াম (২৭) , শাওন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিসিক ২ নম্বর গেইটে ডান পাশের ৩ নম্বার গলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাসেল মাহমুদের লোকজন গার্মেন্টস থেকে ঝুট নিতে আসে। তখন ফতুল্লা থানা বিএনপি সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন তাদের বাধা দেয়। তারপর তাদের উভয়ের মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দু’গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জরিয়ে পড়ে। এরপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় দুই গ্রুপের মধ্যে। এতে উভয়পক্ষের দুইজন গুরুত্বসহ আহত হয়েছে প্রায় ১২ জন। এসময় কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে বিকাল ৪টায় খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলে যায়।
ভাংচুর ও লুটের শিকার হওয়া দোকানদার রবিউল ও আব্দুল জানায়, হঠাৎ কিছু পোলাপান লাঠি, রামদা,চাইনিজ কুড়াল নিয়ে আমার দোকানের সামনে আসে। এসেই ভাংচুর শুরু করে, পরে আমার দোকানের ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া আমার দোকানের ফ্রিজ খুলে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। দোকানের সাটার গুলো কুপিয়ে রেখে যায়। আমাদের মারধর করতে আসছিলো, আমরা আগেই দোকান রেখে পালিয়ে যাই।
স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী জানায়, বরিশাইল্লা জাহাঙ্গীর, ঢালাই সিরাজ, ইকবাল ও বোরহান লোকজন নিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। ভেতরে ঢুকে লুটপাট করার চেষ্টা করেছে, আমি সাথে সাথে গেইট তালা দিয়ে ফেলেছি। ভেতরে ঢুকতে না পেরে আমাদের বাড়ির গেইট ও আসে পাশের দোকানপাট কুপিয়েছে। তিনজনকে মারধর করেছে, এরমধ্যে একজনকে কুপিয়েছে। কোপানোর পরে আমরা ওই ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। কিছু সময় পরে আবারও হামলাকারীরা আসে, এ সময় আরও লোকজনকে পিটিয়েছে। যারে কুপিয়েছে সে বিসিক এলাকার একজন শ্রমিক, সে মূলত দুপুরের খাবার খেতে বাসায় আসে, তখনই তাকে রাস্তায় কোপায় হামলাকারীরা। আমরা চাই এই ঘটনার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং যে লুটপাট হয়েছে সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পূরণ করা হোক।
স্বেচ্ছাসেবক দল ফতুল্লা থানা কমিটির সদস্য সচিব নেতা রাসেল মাহমুদ জানায়, আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিসিকে বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকদের কাছ থেকে গার্মেন্টসের ওয়েস্টেজ (ঝুট) নিয়ে ব্যবসা করি। এছাড়া বিসিকে মালিকদের ব্যবসায়ের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছি। কিন্তুজাহাঙ্গীর, ঢালাই সিরাজ, ইকবাল ও বোরহান তার লোকজন নিয়ে আমাদের জুট নিতে বাধা দেয়। আমরা তাদের সাথে কথা বলতে চাই, কিন্তু তারা আগ্নেঅস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের বেশ কিছু লোকজনকে কুপিয়ে জখম করে। আশে পাশে কিছু দোকানপাট ছিলো, সেগুতে হামলা ও লুটপাট করে। আমাদের মধ্যে আহতদের নিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করি। আমরা এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
দীর্ঘদিন ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখানে আর কোন হানাহানির খবর পাওয়া যায়নি। কারণ পুরো গার্মেন্টস খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আওয়ামীলীগ নেতাদের। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হঠাৎ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অনেক ঝুট সন্ত্রাসী ভোল পাল্টে বনে যান বিএনপি নেতা। বিসিক শিল্পনগরীসহ নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট সেক্টরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হয় শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। এক পক্ষকে ঘায়েল করতে আরেক পক্ষ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শাসনগাঁ এরাকাবাসীর অভিযোগ, বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রণি, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বরিশাইল্যা জাহাঙ্গির ও সিরাজ বাহিনী। এছাড়াও ফতুল্লার বাবুরাইল, আমবাগান, হোসাইনীনগর, বাংলাবাজার ও দেওয়ানবাড়ি এলাকায় ঝুটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত অনিক মির্জার বাহিনী। এছাড়াও রয়েছে রাজু, জুয়েল, মামুন, সোহেল, ফয়সাল ও ইমনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং।
সম্প্রতি সবচয়ে বড় সংঘর্ষ হয়েছে ফতুল্লার পঞ্চবটী এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে। নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রণির বিরুদ্ধে তার ঘনিষ্ঠ কর্মী জাহাঙ্গির ও সিরাজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী নিয়ে বিসিকের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
রাসেল মাহমুদ জানিয়েছেন, তিনি ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ও ফতুল্লা থানা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক। কোন রাজনৈতিক পারিচয়ে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিসিকের বাসিন্দা হিসেবেই ব্যবসা করে আসছেন তিনি। বিসিকের ভিতরেই তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হঠাৎ করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় রণি বাহিনী। শুধু তাই নয়, ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে একটি গ্রুপ আমাকে সাবেক ছাত্রদল নেতা আনু হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। অথচ পুলিশ এবং চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি এটি হত্যা না আত্মহত্যা। কিন্তু অপপ্রচার চলছেই।
এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীরের বিরুদ্ধে ঝুট সন্ত্রাসী রণিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাডভোকেট আলমগীর। তার দাবি, গার্মেন্টস মালিকরা স্বেচ্ছায় তার লোকজনকে ঝুট দিচ্ছেন। এখানে কোন ধরনের দখলবাজির ঘটনা ঘটছে না বলেও দাবি করেন এ বিএনপি নেতা। বিসিক ছাড়াও জেলখানার পিছনে অবস্থিত রপ্তানিমুখি বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা ফকির গার্মেন্টস থেকেও ঝুট বের করে আনার অভিযোগ উঠেছে
জাহাঙ্গীর বলেন,দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের লোকজন জুট ব্যবসা করেছেন। আর ঝুট ব্যবসা হাত দিতে না দিতেই ঝুটসন্ত্রাসী হয়ে গেলাম। আমি এই কর্মকান্ডে জড়িত নই। একটি মহল আমার পিছনে লেগেছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঝুট নিয়ে গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থির করতে দেয়া হবে না। এখানে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। দেশের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। বিভিন্ন গ্রুপের ফোন পাচ্ছি পাচ্ছি প্রতিদিন। সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি। একইসঙ্গে সবাইকে বলেছি, মিলেমিশে কাজ করতে। বিশৃঙ্খলা করলে কাউকে গার্মেন্টসে ঢুকতে দেয়া হবে না। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এ দিকে বিশেষ নজর রাখছে।
নারায়ণগঞ্জের বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বলছেন, বিএনপি গণমানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করবে। ঝুট সেক্টর দখল করা বিএনপি নেতাকর্মীদের কাজ নয়। বিএনপি’র নামে কিছু সুবিধাবাদি লোক এসব করছে। এ সকল লোকজন হয়তোবা আওয়ামীলীগের লবির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে ফায়দা লোটার জন্য। এমন সুবিধাবাদিরা দলে ঠাঁই পাবেনা। কেউ প্রমাণসহ ধরা পড়লে প্রচলিত আইনে বিচার হবে। বিএনপি সন্ত্রাসীদের দল নয়। বিএনপি মাটি, মানুষের দল।