নাঃগঞ্জ ঘুরে গেলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ
আহমেদ তৌফিক :
প্রকাশ: ০০:২৭, ২৫ মার্চ ২০২৫

প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ ঘুরে গেলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ। উপলক্ষ ছিল ইফতার মাহফিল। গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) ফতুল্লার অক্টোঅফিস এলাকায় বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে ওই ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব এড. আব্দুল্লাহ আল আমিনের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, শওকত আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এক বক্তব্যে সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি সময় ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র চলছে। কোনভাবেই যদি ফ্যাসিবাদকে আবার পূর্ণদাসিত করার চেষ্টা করা হয় তাহলে এনপিসি তার রুখে দিবে। এই বিগত ১৫ বছরের আগেও আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করেছিল, তারপরে ১৫ বছর কি নির্যাতন জুলুম চলেছে তা সবাই জানে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগকে কখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করে তার নিবন্ধন বাতিল করা হোক।’
এ সময় সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের অনেক ভাই ও বোনেরা শহীদ ও আহত হয়েছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের একটি নতুন দল এবং নতুন রাজনৈতিক আকাঙ্খা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় দেশকে নতুনভাবে গড়তে এই দলের প্রতিষ্ঠা হওয়া। আমরা জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে একটি নতুন রাজনীতি গড়ে তুলতে চাই, যা আগামীর বাংলাদেশকে নতুনভাবে তৈরি করবে। আমরা গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের বিচার, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার ও একটি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির কথা বলছি। গণঅভ্যুত্থানের পর যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের বিচার সুনিশ্চিত করা না হয়, তাহলে এই দেশে যে আরেকটি ফ্যাসিবাদ দেখব না তা নিশ্চিত নয়। তাই নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার সুনিশ্চিত করাই আমাদের অন্যতম দাবী। আমরা চাই না পুরনো সেই সিস্টেমের মধ্যে আবার ফিরে যেতে, কিন্তু কিছু দল তারা পুরোনো বন্দোবস্তের দিকেই ফিরে যাচ্ছেন। তারা সংস্কার প্রতি অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। যে যতই অনাগ্রহ দেখাক, আমরা সংস্কার ও পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। আমরা যে সংবিধান আছে সেজন্য একটি গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। কারণ পুরনো সংবিধান দিয়ে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়। নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াবো এবং তাদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যতটুক দরকার ততটুকু আমরা সাহায্য সহযোগিতা করব। সমাজে চাঁদাবাজির দখলদারির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে।’
ইফতার মাহফিলে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নানান ধরনের বাস্তবতা আছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাস্তবতার মধ্যে আছি। পুরো জনগোষ্ঠীর একটি ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও আমরা তরুণরা যে ধরনের রাজনৈতিক ধারা তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বলছি বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন। সেই সংবিধান অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া, আর কোনো সরকার, আর কোনো নির্বাচনে ম্যান্ডেট নাই যে, নতুন সংবিধান তৈরি করে দিতে পারবে। এই সংবিধান একটি প্রশ্নবিদ্ধ সংবিধান, অভিশপ্ত সংবিধান। এই সংবিধানের মধ্যে মানুষের মতামতের জায়গা রাখা হয় নাই। এই সংবিধান একটি দলীয় সংবিধান ছিল। এই সংবিধান একটি একব্যক্তি কেন্দ্রিক সংবিধান, এই পার্লামেন্ট এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক পার্লামেন্ট ছিল।
সামান্তা শারমিন বলেন, এখন যে সচিবালয়, এখন যে মন্ত্রণালয়ে বসে যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা সবাই এক দলীয় এবং এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সচিবালয় মন্ত্রণালয় চালিয়ে আসছেন। আমাদেরকে সেবা ভিত্তিক রাজনীতির কথা বলতে হবে। যদি আমরা তরুণদেরকে নতুন রাজনীতির ধারার ক্ষেত্রে আগ্রহী করতে চাই তাহলে অবশ্যই শোডাউনের রাজনীতি পরিবর্তন করে দায়িত্বের কথা বলতে হবে। রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তনের যে দায়িত্ব আমরা কাঁধে নিয়েছি সেটা শুধু এনসিপির নয়। সকল রাজনৈতিক দলকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। দেখেছি ঐক্যমত্য কমিশনে অনেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই গণপরিষদ নির্বাচন ব্যতীত বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন এই গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট ধারণ করবে না। গণপরিষদ নির্বাচন কোনো কঠিন বিষয় নয়। বাংলাদেশে যখন আধুনিক কলকবজা ছিল না, তখনই গণপরিষদ নির্বাচন এই ছাত্র, জনতা, শ্রমিক, কৃষকের হাত ধরে এসেছিল। তাহলে, এখনকার যে আধুনিক প্রজন্ম এই গণপরিষদ বুঝবে না, এটা বলে আমাদের দেশের মানুষকে জাতিগত অপমান করা হয়।