গরমের শুরুতেই এসি বিস্ফোরণ, নাঃগঞ্জে সতর্কবানী
আহমেদ তৌফিক :
প্রকাশ: ০০:৪৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ০০:০৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এসি বিস্ফোরণ
ফাগুন মাস আসতে না আসতেই এসি’র কমপ্রেসর বিস্ফোরণ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে ২ জন টেকনিশিয়ান নিহত হলেন। এই দূর্ঘটনাকে সতর্কবার্তা মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। মাত্র গরমকাল উকি দিচ্ছে। শীত বিদায় নিচ্ছে। তবে এখনো সকালে শীতের রেশটুকু চোখে পড়ে। এরই মধ্যে এসি বিস্ফোরণ ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে গেল। যারা এসি ব্যবহার করে গরমে আরামে থাকতে অভ্যস্থ তারা অবশ্যই এসি বিষয়ে সতর্ক হবেন। গরম সিজনের শুরুতেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিবেন। সমস্যা থাকলে তা অবশ্যই দূর করবেন। নইলে বিপদ বলে কয়ে আসেনা। আরামদায়ক যন্ত্রটি হয়ে উঠতে পারে নারকীয় যন্ত্রণাদায়ক দূর্ঘটনার কারন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসি কেনার সময় ভালো করে যাচাইবাছাই করে দেখা উচিত।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কয়েকজন টেকনিশিয়ান জানান, "এসি কেনার ক্ষেত্রে টাকা বাঁচাতে গিয়ে আমরা অনেকসময়ই ভালো ব্র্যান্ডের এসি না নিয়ে নন ব্র্যান্ডের সস্তাগুলো নিয়ে থাকি। কিন্তু সেটি আসলে পেশাদার মেকানিক তৈরি করছেন না ধোলাইখালের মত জায়গায় তিন-চারটা নষ্ট এসি থেকে ভালো পার্টসগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে, তা আমরা জানি না। তাই এরকম যন্ত্র কেনার সময় দাম বেশি হলেও ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য কেনা উচিত।"
২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর এসি ব্যবহার, গ্যাসের লাইনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের।
নারায়ণগঞ্জে দুর্ঘটনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল যে এসি বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তবে পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে মসজিদটির মেঝের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপে ফুটো থাকায় মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
গ্যাসের লাইনে লিক থাকা, এসি বিস্ফোরণ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের মত ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরণের দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে বাসা বাড়িতে।
রাজধানীর উপকন্ঠে নারায়ণগঞ্জ জেরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসি-ফ্রিজ বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। নকল ও নিম্নমানের এসি-ফ্রিজ ব্যবহারে কম্প্রেসর বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, এসির আউটডোর ইউনিট ও ভবনের ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা না থাকা এবং ত্রুটিপূর্ণ ইনস্টলেশনকেও এসি বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ জন্য ত্রুটিমুক্ত ইনস্টলেশন, সঠিকভাবে নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের তদারকির মধ্যে নিয়ে আসা, সার্টিফিকেশন/রেটিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্রিজ-এসির মেয়াদ দেখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপসহকারী পরিচালক মো: আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘ইলেকট্রনিক পণ্যে কেমিক্যাল ব্যবহারের নীতিমালা থাকা উচিত। এ ছাড়া সরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১০ বছরে বাংলাদেশে ফ্রিজ, এসিসহ ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। অনেক সময় কম্প্রেসরের ভেতরে জ্যাম লেগে থাকে, গ্যাস লিক হয়ে যায়। সময়মতো সার্ভিসিং না করালে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
এ ছাড়া ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেও এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজের কারণেও এসব ঘটনা ঘটে। হাই ভোল্টেজের কারণে ইলেকট্রিক মেশিনের ওপর চাপ সৃষ্টি হলেই সেখানে সমস্যা হয়।’ এজন্য প্রতিটি ভবনে সার্কিট ব্রেকার, ভালো মানের আর্থিং লাইন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ২০১৯ সালের শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে ১০ কোটি টাকার এক হাজার ১০০টি নকল এয়ারকন্ডিশনার আটক করে। সেগুলোয় নামি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসির যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। মূলত এসব নিম্নমানের, নকল এসিতেই বিস্ফোরণ হচ্ছে।
দীর্ঘসময় এসি চালিয়ে রাখার ফলে ভবনের বৈদ্যুতিক সক্ষমতার ওপর চাপ পড়তে পারে, যেখান থেকে অনেকসময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার দীর্ঘ সময় লাইট বা ফ্যান অন করে রাখা, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পাওয়ার সোর্স বন্ধ না করার ফলেও শর্ট সার্কিটের সূত্রপাত হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, বিদ্যুতের লোড অনুযায়ী কেবল ব্যবহার না করা, মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার না করা, ভবনের নকশায় দুর্বলতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ইত্যাদি নানা কারণে একটি ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতে, "ছোট ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, যেমন মাল্টিপ্লাগ বা সকেট কেনার ক্ষেত্রে আমরা টাকা বাঁচাতে কম দামীগুলো কিনে থাকি এবং মাল্টিপ্লাগে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনের মত ভারী যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করি। এই কমদামী মানহীন মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করা বা একটি প্লাগে একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র সংযুক্ত করে চালানো শর্ট সার্কিটের একটি বড় কারণ।"