মানুষকে স্বস্তি দিতে যানজট নিরসনে পুলিশকে অনুদান দিবে কে ?
রমজানে নাঃগঞ্জ মহানগরীতে যানজট পরিস্থিতি নিয়ে শংকা
বাংলাবাজার বার্তা ডেস্ক :
প্রকাশ: ০১:২৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ২২:৫৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ জেলার মূল সমস্যা হচ্ছে যানজট ও হকার। এই জেলায় নবাগত জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদানের পরপরই বিষয়টি অবগত হয়েছিলেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার মূল সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রতিও দিয়েছেন। কিন্তু যানজট ও হকার সমস্যা দিনে দিনে আরো বাড়ছে। শহরের যানজট ও হকার সমস্যার সমাধান না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে বোদ্ধামহল ও নাগরিক সমাজ।
নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, অন্যান্য সকল সমস্যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রধান সমস্যা হল শহরের যানজট। এটাকে সহনীয় পর্যায়ে আনা আমার কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। আমরা শহরের হকারদেরকে একটি শৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করব, বিশেষ করে যারা ভ্যানে হকারি করে। পাশাপাশি যানবাহনগুলো যাতে একটি নির্দিষ্ট লেনে চলাচল করে সেই দিকটিও বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
নগরবাসী আশঙ্কা করছেন, এবারে পবিত্র রমজান মাসে শহরবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। নাসিক ও জেলা প্রশাসন মিলে রমজানে শহরের যানজট ও হকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেনা। হকাররা খুবই বেপরোয়া আচরণ করে থাকে। তাদের দখলে চলে গেছে পুরো বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত ও সড়কের অংশ বিশেষ দখল করে নিয়েছে। ওই সকল হকারদের পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় রয়েছে। খুঁটির জোরে ছাগল নাচছে।
শহরের মৌলিক সমস্যা নিয়ে নাগরিক সমাজ সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। তাঁরা বলছেন, ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতেই চাষাড়া মোড় পার হতে ২০/৩০ মিনিট সময় লাগে। রমজানে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে। তখন হয়তো চাষাড়া মোড় পেরুতে ঘন্টা চলে যাবে। রোজাদার মানুষের মনে তখন কেমন প্রতিক্রিয়া হবে। তখনতো রাস্তাঘাটে আরো বেশি যানবাহন চলাচল করবে। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচলও বাড়বে।
নাগরিক সমাজের কয়েকজন বিদগ্ধ লোক আরো জানান, প্রতিবার রমজানে সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান রমজান মাসে শহরের যানজট ও হকার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে মোটা অংকের অনুদান দিতেন। এবারতো মনে হয়না নারায়ণগঞ্জের কোন ব্যবসায়ী নেতা এই উদ্যোগ নিবে। কারণ ব্যবসায়ীক সংগঠনগুলোতে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। রমজান মাসে শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে যানজট নিরসনে পুলিশকে মোটা অংকের টাকা অনুদান দিবেন-এমন নেতা হয়তো আছেন, কিন্তু তাদের মন মানসিকতা আছে বলে মনে হয়না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন গত রোববার (২ ফেব্রয়ারি) নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৮ দফা দাবির স্মারকলিপি প্রদান শেষে বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, যানজট বাড়ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া শহীদ পরিবারগুলো মামলা জনিত হয়রানির শিকার হচ্ছে, এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক যেন ব্যবস্থা নেয় আমরা তাকে বলেছি। জেলা প্রশাসক আমাদের কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ যেহেতু আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিলো, তাই শহীদদের স্মরণে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানে গুলি চালানো সব খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানানোর কথাও উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন। দল গঠনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ বেশ ভালোভাবেই চলছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন পেশাজীবিদের সাথে আমাদের সংলাপ ও আলোচনা চলছে। অতি দ্রুত সময়ে রাজনৈতিক দল ঘোষণা হবে এবং ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই নতুন দল গঠিত হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসককে। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের আত্মা শান্তি পাবেনা যদি ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দোসরদের শাস্তি না হয়। এর আগে শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সহ কেন্দ্রীয় কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী বলেন, আমরা অনেকে চিন্তা করি হকার পূর্নবাসন না করে উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে। কিন্তু এভাবে চিন্তা করার উচিত নয়। আগস্টের আগে মেয়র আইভী অনেককে ধরে এই ফুটপাত ও সড়ক যানজট মুক্ত করেছেন। কিন্তু আজকে নারায়ণগঞ্জের কোনো মা-বাবা নেই। মানুষ হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না। এই বিপ্লবী সরকার যদি বিপ্লবী পরিবর্তন করত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তাদের কাছে কিছু আশা করা কঠিন ব্যাপার।
এনসিসির ট্রাসনপোর্ট প্লানার ফাহাদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ট্রাসনপোর্টের জন্য বিভিন্ন প্ল্যান রয়েছে। তারা বলছে তারা আরেকটা টার্মিনাল করবে। যেখানে আই জায়গায় ২ কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটা টার্মিনাল আছে। সেই টার্মিনালটার ১০ শতাংশ পর্যন্তা এখনো তারা ইউটিলাইজ করতে পারেনি কিন্তু নতুন প্রকল্প এনেছে। আমরা ভিজিট করতে গিয়েছিলাম, আমরা দেখেছি সেখানে ২ মাসের মধ্যে ১ টা জাহাজ এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। একটা সমস্যা তো রাতারাতি সমাধান হবে না তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, কিছুদিন আগে এনসিসিতে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এখানে কদম রসূল সেতু, খানপুরের পোর্ট কন্টেইনার, পঞ্চবটি থেকে উড়াল সেতুর কাজের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও এ শহরের সকল সমস্যাগুলো হয়েছে কারণ এখানে একটি অপরিকল্পিত নগরায়নের মধ্যে আমরা বাস করছি। এই প্রকল্পগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এরে আরো এই মহানগরী কলাপস করবে।
নারায়ণগঞ্জে বিগত ১৫০ বছরে জনগণ বেড়েছে ৩৪ গুণ। কিন্তু আরো ১০০ বছর পর আমাদের এই নগরীতে জনগণ দাঁড়াবে ৩ কোটি আর বেশি। এখানে যে প্রকল্পগুলোর কথা বলা হলো সেগুলো এনসিসি নয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিয়েছে। এনসিসি চিঠি দিয়েছে এগুলো না করার জন্য। আমরা জানি যত প্রকল্প তত লুটপাট। স্বাধীনতার আগে বা পরের কোনো সরকার নারায়ণগঞ্জের দিকে সু-নজরে থাকেনি। এখানে যারাই প্রতিনিধি হয়েছে তারা সবাই লুণ্ঠন করছে।
গত ২৭ জানুয়ারী নাসিক এর নগরভবন অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত অংশীজনদের আলোচনার মোদ্দাকথা ছিল, শহরের ফুটপাত ফের দখল হয়ে গেছে। শহরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। হকাররা ফুটপাতে পসরা নিয়ে বসছে। ফুটপাতের দুই পাশে হকারদের দোকান। আরেক গ্রুপ ফুটপাত ঘেষে রাস্তায় দোকান সাজিয়েছে। সবমিলিয়ে হকারদের দোকানের কারণে রাস্তায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একদিকে বঙ্গবন্ধু সড়কে চলছে ড্রেন সংস্কারের কাজ। অন্যদিকে হকারদের দোকান পাট বাড়ছে। ওরা শহরবাসীর ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সুধীমহলের অনেকেই বলেন, হকাররা শহরবাসীকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। নতুন কিছু নেতার প্রশ্রয়ে হকাররা এতটাই বেপরোয়া যে, ওরা মানুষের বাড়িঘর শুধু বাকি রাখছে। ফুটপাতের কোন অস্তিত্বই থাকছেনা।
শহরবাসী ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলছেন, হকাররাতো দেখা যায় ডাকাত। ওরা স্বার্থউদ্ধারের বেলায় কাউকে পরোয়া করে না। ওরা সবই জানে। প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা একটেবিলে একসাথে বসে নারায়ণগঞ্জ শহরকে হকারমুক্ত ও যানজটহীন নগরী ঘোষনা করেছিল ৩ ফেব্রুয়ারী। ত্রি-রত্ন এও বলেছিলেন, হকাররা কোথায় যাবে-আমরা জানিনা। তোমরা বিকল্প খুঁজে বের কর। আদমজী বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় মানুষ বলেছিল পাটকল শ্রমিকরা যাবে কোথায় ? পাটকল শ্রমিকরা ঠিকই বিকল্প খুঁজে নিয়েছে। তেমনি হকারদেরও নিজেদের বিকল্প উৎস্য খুঁজতে হবে। এই শহরে হকাররা ডাঃ আইভীর উপর হামলা করেছিল।
কোন যুক্তি দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাস্তাঘাট দখল করে হকার বসতে দেয়া যাবে না। ৮০০ হকার থেকে বর্তমানে হকার সংখ্যা দাবি করা হচ্ছে ২৫ হাজার। শহরের ফুটপাতকে ইপিজেড মনে করার কোন কারণ নাই। নারায়ণগঞ্জের আমজনতা বলছে, হকার ভাইয়েরা আপনারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। নিজেদের বাড়ি ঘরে ফিরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেন।
অটোচালকদের পাশপাশি হকাররাও বেপরোয়াও হয়ে উঠেছে। শহরের ফুটপাত ফের দখল হয়ে গেছে। হকাররা তিনটি স্তরে ফুটপাতে পসরা নিয়ে বসছে। ফুটপাতের দুই পাশে হকারদের দোকান। আরেক গ্রুপ ফুটপাত ঘেষে রাস্তায় দোকান সাজিয়েছে। সবমিলিয়ে হকার তিনস্তরের দোকানের কারণে রাস্তায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সড়কে চলছে ড্রেন সংস্কারের কাজ। শহরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, পবিত্র রমজান মাসে শহরবাসীকে যানজট ও হকারদের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে নিশ্চয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন কোননা কোন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে। মানবতার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার কাছে নারায়ণগঞ্জবাসী তেমন উদ্যোগ আশা করেন। তাছাড়া হয়তো কোন সহৃদয়বান ব্যবসায়িক নেতাও জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে কোন মহৎ উদ্যোগ নিতে পারেন।