নারায়ণগঞ্জ সিটিতে তীব্র পানির সংকট

বাংলা বাজার বার্তা

প্রকাশ: ০০:২৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ সিটিতে তীব্র পানির সংকট

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কখনও পানি পাওয়া গেলেও পানিতে থাকছে ময়লা ও দুর্গন্ধ। সিটি করপোরেশন বলছে, সিটি এলাকায় ১৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও তাদের সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ১১ কোটি লিটার। গত প্রায় ৩০ বছর ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ জোন তাদের মেশিনপত্রে কোনো ধরনের আধুনিকায়ন না করায় প্রায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি পাম্প নষ্ট থাকছে। ফলে সংকট থেকেই যাচ্ছে।

তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, আগে সমস্যা থাকলেও ৫ আগস্টের পরে মেয়র, কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়ায় তদারকির অভাবে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে।  নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের খানপুর এলাকার হাফিজা আক্তার বলেন, ‘প্রায়ই পানি আসে না। গত সোমবার থেকে টানা পানি নেই। বুধবার পরিবারের সবাই কাশিপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে গোসল করে ড্রাম, কলসি ভরে পানি নিয়ে এসেছি।’

একই এলাকার হেলেন খন্দকার বলেন, পানি যখন থাকে তখনও এর মান খারাপ থাকে। ময়লা ও পোকা থাকে পানিতে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আল্লামা ইকবাল রোডের বাড়িওয়ালা জালাল উদ্দিন রাসেল। গত সোমবার থেকে তাদের বাসায় পানি নেই। পাঁচ তলা ভবনের সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি এনে ব্যবহার করছেন। এভাবে কি চলা যায়? সিটি করপোরেশনের বন্দর অংশের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপাড়ার বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ জানান, তাদের এখানে প্রায় দুই বছর ধরে সিটি করপোরেশন পানি দিতে পারছে না।

বন্দরের ‘অবিচল রাজবাড়ি’ নামের সংগঠন বন্দরের ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বাভাবিক পানির দাবিতে দুই বছর ধরে আন্দোলন করছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আতিক মানিক বলেন, আন্দোলনের কারণে কিছু এলাকায় এখন পানি যাচ্ছে। কিন্তু বাবুপাড়া, শাহী মসজিদ, সালেহনগর, এস এম রোডসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও ওয়াসার পানি যাচ্ছে না।

১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নগরবাসীর জন্য নিজস্ব পানি ব্যবস্থাপনা ছিল। পরে ১৯৯০ সালের ১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সব মেশিনারিজ, পানির লাইনসহ পানি সরবরাহের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে সিটি করপোরেশন ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ জোনের দায়িত্ব ফেরত নেয়। সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ওয়াসার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনকে অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠতে থাকে।

সিটি করপোরেশনের বন্দর অঞ্চলের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলি জানান, ওয়াসা ৩০ বছর ধরে খুব কম পরিমাণ বিল তুলেছে। ফলে ৩০ বছর আগে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে যে মেশিনারিজ, লাইন নিয়েছে সেগুলো আর সংস্কার করেনি। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই ওয়াসার কোনো না কোনো মেশিন নষ্ট হচ্ছে, লাইনে ফল্ট হচ্ছে। নতুন করে নারায়ণগঞ্জে ৩৪টি পাম্প বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, এগুলো বসানো হলে সংকট থাকবে না।

এদিকে, পানি সংকটে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, পাম্প কম, পুরোনো লাইন এসব ৫ আগস্টের আগেও ছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রায় সব অঞ্চলে তখনও পানির এত তীব্র সংকট তৈরি হয়নি। কারণ এখন সিটি করপোরেশনের কোনো মা-বাপ নেই। প্রশাসক আসে মাত্র দু’দিন। মেয়র, কাউন্সিলরদের বাদ দেওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে।

কাউন্সিলরের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের। তাদের মানুষ ফোন দিয়ে পায় না, সিটি করপোরেশনে গিয়ে পায় না। অবিলম্বে কাউন্সিলরদের তাদের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকে সেটির বিচার হবে। কিন্তু জনপ্রতিনিধির কাজ সরকারি কর্মকর্তাকে দিয়ে সম্ভব না বলে দাবি করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটা সত্য, আমি সপ্তাহে দুই দিন আসি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সপ্তাহে প্রতিদিন না এলে তদারকির অভাব হয়। এটি বিবেচনা করে সরকার প্রতিটি সিটি করপোরেশনের ফুলটাইম প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’

সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমাইল চৌধুরী, সদর অঞ্চলের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আসগর হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের জানান, গোদনাইল পানি শোধনাগারের পাম্প ৫ নভেম্বর নষ্ট হয়ে ২২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বাগ-ই জান্নাত মসজিদের সামনের পাম্প এখনও বিকল। নিতাইগঞ্জের নষ্ট পাম্প মেরামত করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের তাঁতখানায় পাম্পে কাজ চলছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানতলিতে, ধনকুন্ডাতে সমস্যা ছিল, সেগুলো মেরামত করা হয়েছে।

এসব কারণে নগরীর বিভিন্ন অংশে পানির সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও তাদের সক্ষমতা ১১ কোটি লিটার। ফলে সংকট থেকেই যায়।

তারা ৫ কোটি টাকার পানি নগরবাসীকে প্রতি মাসে দিলেও নগরবাসী ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো পানির বিল দেন। ওয়াসার বিদ্যুৎ বিলই দিতে হয় দেড় কোটি টাকা। ফলে নগরবাসী যে টাকা দেন সে টাকা দিয়ে নতুন পাম্প কিনতে পারছেন না বলে জানান তারা।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন